Rajrappa Berate jete chaichen ? Tahole ei lekhata porun
Rajrappa ভ্রমণ করতে চাইলে এই লেখা থেকে সব তথ্য ছবি সহ পাবেন। সত্যিই ভ্রমণ করার জন্য এবং দেবীর দর্শন করার জন্য Rajrappa is Best.
![]() |
Rajrappa |
Travel Rajrappa, Jharkhand
বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়
অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম যাব যাব কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আসলে বাড়ির কাছের জিনিশ গুলোই কেন জানি না দৃষ্টি এড়িয়ে যায় বেশি। শেষ পর্যন্ত তিন শিক্ষক বন্ধু মিলেই ঠিক করলাম সামনের রবিবার,- রাজরাপ্পা। তখন তো ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট নবোদয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম। তেনুঘাট থেকে পেটরওয়ার হয়ে রাজরাপ্পা মাত্র ত্রিশ কিলোমিটারের মতো হবে। হাওড়া থেকেও ট্রেন ধরে আসা যায়। হাওড়া টু বোকারো, প্রায় চারশো কিমি। বোকারো টু পেটরওয়ার, পঞ্চাশ কিমির মতো। পেটরওয়ার থেকে রাজরাপ্পা পনেরো কিমি। হাওড়া থেকে রাঁচি রামগড় হয়েও পেটরওয়ার পথে রাজরাপ্পা অনায়াসে আসা যায়।
![]() |
Rajrappa |
আমরা তেনুঘাট থেকেই ভাড়া গাড়িতে রওনা দিয়েছিলাম। কচি সূর্যের নরম আলোতে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাল সেগুন আর মহুয়ার গাছ গুলো ঝলমল করছিল। যতদূর দৃষ্টি পড়ে শুধুই সবুজ অরণ্যের মায়াবী ডাক আর নীলাভ সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। এমন পরিবেশের উপর দিয়ে ছোটার সময় রোম্যান্টিক গাড়ির ড্রাইভার গান চালিয়ে দিয়েছিল,- চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত তুম ইয়াদ রাখ না...। মাঝে মাঝেই মহুয়া গাছের ওপারে ভেসে উঠছিল আদিবাসীদের মাটির বাড়ি গুলো। পেটরওয়ার থেকে রাজরাপ্পার পথ ধরার কিছুক্ষণের ভেতরেই চোখে পড়ল বেশ কয়েকটা ডাহুক ডাহুকী। বাঁশ জঙ্গলের ভেতর শরীর ডুবিয়ে ওরা আগন্তুকদের দেখছিল।
![]() |
Rajrappa |
রাজরাপ্পা পৌঁছতে যখন আরও বেশ কয়েক মিনিট বাকি তখন প্রথম বারের জন্য চোখে পড়ল মা ছিন্নমস্তার মন্দির। হঠাৎ করেই মনে পড়ল সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের উপন্যাসটার কথা। বুকের ভেতরটা নিজের অজান্তেই ছমছম করে উঠল। সূর্যের আলো এসে পড়ছে মন্দিরটার চূড়ার উপর। কাকের কর্কশ কলহ কানের ভেতরে নিয়ে আমরা যখন গাড়ির থেকে নামলাম ততোক্ষণে ভক্তে ভরে গিয়েছে মন্দির চত্বরটা।
![]() |
Rajrappa |
গাড়ি থেকে নামার পরেই চোখ পড়ল দামোদর নদের উপর। ঠিক মন্দিরের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে দামোদর। আমরা একটা দোকানে নিজেদের জুতা-মোজা-বেল্ট জমা দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর পূজার ডালি ফল ফুল মালায় সাজিয়ে চললাম মায়ের পূজা দিতে। দুপাশের দোকান গুলোতে জবা ফুলের মালা গুলোও যেন নিজের তালে দুলছিল। দামোদরের উপর ঝুলতে থাকা সেতুটা পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে উঠেই শিবের মন্দির। চোখ পড়ল ফুট বারোর শিব লিঙ্গটার উপর। শিব মন্দিরটার পাশেই যজ্ঞকুণ্ড। মন্দির প্রাঙ্গণে কয়েকশ বছরের গল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল একটা বটের গাছ। যজ্ঞকুণ্ডটার পাশেই মায়ের মন্দির। ভক্তের দল দীর্ঘ প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্দিরের দেওয়াল ঘেঁষে।
![]() |
Rajrapp |
নিজের ছিন্ন মস্তক নিজের হাতে ধরে নিজেরেই রক্তপান করছেন মা। বিগ্রহের সম্মুখে দাঁড়িয়ে গাঁয়ে কাঁটা দিচ্ছিল। আমাদের পূজা দেওয়া সম্পূর্ণ হতে কখন যে দশটা পেরিয়ে গেল খেয়াল করতেই পারলাম না। মন্দিরের কিছু ছবি নিয়ে আমরা নেমে এলাম দামোদরের কিনারায়। এতক্ষণ খেয়াল করিনি মন্দিরের থেকে কিছুটা দূরেই দামোদরের বুকে আছড়ে পড়ছে ভৈরবী নদী। অপূর্ব সুন্দর মিলন দৃশ্য। যেন কোটি কোটি হীরের টুকরো লাফিয়ে পড়ছে দামোদরের বুকে। নৌকায় ভেসে যাচ্ছে অচেনা যাত্রীরা। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো একটার পর একটা দৃশ্যকে চিত্র বন্দী করছি। দুটো নদী একে অপরকে জড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে অনেক অনেক দূরের দিগন্ত রেখার দিকে। ওদের চলার শেষ নেই। ওরা এখনো চলছে।
যখন প্রাচীন মন্দির আর নদী দুটোকে পিছনে ফেলে রেখে আমাদের গাড়িটা পেটরওয়ারের দিকে ছুটছে তখন আমাদের মন ভক্তি আর প্রকৃতি দুটোতেই পরিপূর্ণ। রাস্তার বুকে সন্ধা গড়িয়ে নেমেছে। জলের সন্ধানে চলেছে কয়েকটা শেয়াল। মন্দিরটাকে আর দেখা যাচ্ছে না তবুও চোখের পাতায় ভাসছে মন্দিরটা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
আপনারাও একবার রাজরাপ্পা এসে ঘুরে যান। রাঁচি বা বোকারো যেখানেই থাকুন লজের অভাব হবে না। ৫০০-১৫০০ যেমন রুম চাইবেন অনায়াসে পেয়ে যাবেন। ঝাড়খণ্ডের সরল প্রকৃতির মতোই ঝাড়খণ্ডের মানুষের ব্যবহার। কোনও দালাল ছাড়াই আপনি নিজেই থাকা খওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন। রাজরাপ্পা ঘোরার জন্যেও কোনও গাইড লাগবে না। রাজরাপ্পার প্রতিটা মানুষ বিনা মূল্যের গাইড। আপনি হাওড়া থেকে বোকারো স্টিল সিটি এক্সপ্রেস ধরে বোকারোও আসতে পারেন আবার রাঁচি হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ধরে রাঁচিও আসতে পারেন। যেদিক দিয়েই আসুন রাজরাপ্পায় আসতে সমস্যা হবে না।
No comments:
Post a Comment